আন্তর্জাতিকউখিয়ারোহিঙ্গা সমাচার

মিয়ানমার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জি-৩ রাইফেল উদ্ধার : আরসা”র গ্রুপ কমান্ডার জাকারিয়া গ্রেফতার

মিয়ানমার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর জি-৩ রাইফেল উদ্ধার :
আরসা”র গ্রুপ কমান্ডার জাকারিয়া গ্রেফতার


জাবেদ ইকবাল চৌধুরী, কক্সবাজার :

আরকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) গান গ্রুপ কমান্ডার জাকারিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে বালুখালী ১০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এফ/১৭ ব্লকের বাসিন্দা ও মৃত আলী জোহার”র ছেলে। এ সময় মিয়ানমার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত একটি জি-৩ রাইফেল ও ৫ রাউন্ড তাজা গুলি জব্দ করা হয়। ১৩ জুন বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ১০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে
র‌্যাব -১৫ সদস্যরা।
র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার অফিসের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া)
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবু সালাম চৌধুরী সংবাদের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান,
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব গোয়েন্দা সদস্যরা খবর পায় যে, কক্সবাজারের উখিয়ার ১০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা”র কিছু সদস্য নাশকতার জন্য মিয়ানমার হতে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্র নিয়ে এসেছে। এ সূত্র ধরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র‌্যাব সদস্যরা গত ১৩ জুন বৃহস্পতিবার রাতে উখিয়া বালুখালী ১০ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পালায়নের চেষ্টাকালে আরসা সন্ত্রাসী মোঃ জাকারিয়া (৩২) ’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। ঘটনাস্হে সে স্বীকার করে যে, সে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক এবং সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা”র গান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে বর্তমানে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করতো।
কিলিং মিশনে ব্যবহৃত অস্ত্র পালংখালী ইউনিয়নের ঘাটি বিলে লুকিয়ে রেখেছে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আরসা সন্ত্রাসীকে নিয়ে র‌্যাবের আভিযানিক দল ওই স্থানে যায় এবং সেখানে থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যবহৃত ১টি জি-৩ রাইফেল ও ৫ রাউন্ড তাজা এ্যামুনিশন উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
আরো জানা যায়, গ্রেফতারকৃত জাকারিয়া ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে মিয়ানমার হতে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-১০ এ সপরিবারে বসবাস শুরু করে। মিয়ানমারে অবস্থানকালে আরসার শীর্ষ কমান্ডার আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনি’র সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং আরসায় যোগদান করে। বাংলাদেশে প্রবেশের প্রথম দিকে সে আরসার নেট দল অর্থ্যাৎ সংবাদদাতা এবং পরবর্তীতে গান গ্রুপের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কাজ করে। এরপর ২০২৩ সালের শেষের দিকে সে রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১০ এর ব্লক-এফ/১৭ এর ব্লক কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ পায়। এ সময় তার নেতৃত্বে আরসার অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ কার্য পরিচালনা হতো।

২০২২ সালে গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাবের মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় আরসা সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পর ক্যাম্প এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি করলে সে পালিয়ে পুনরায় মিয়ানমার চলে যায়। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং গান গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে বিভিন্ন কিলিং মিশন ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে। সে অস্ত্র চালনায় দক্ষ হওয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংগঠিত বিভিন্ন নাশকতা, মারামারি, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করতো বলে জানায়।

সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষে লুন্ঠিত অস্ত্র আরসা সন্ত্রাসীরা অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করতো এবং বিভিন্ন মাধ্যম বাংলাদেশে নিয়ে আসতো। পরবর্তীতে এই অস্ত্র গ্রেফতারকৃত জাকারিয়া তার নিকট গচ্ছিত রাখতো। অতঃপর ক্যাম্প-১০ এর আরসা কমান্ডারের নিকট হস্তান্তর করা হতো এবং ক্যাম্পে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রমে এ সকল অস্ত্র ব্যবহার করতো। গ্রেফতারকৃত জাকারিয়ার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও দুইবার কারাভোগ করে বলে জানা যায়।
এ ছাড়া র‌্যাব বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করে আসছে। সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদ, অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস, গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ মুছা, অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদ প্রকাশ নোমান চৌধুরী ও আবু তৈয়ব, কিলার গ্রুপের প্রধান নূর কামাল ওরফে সমিউদ্দিন, ইন্টেলিজেন্স সেল এর কমান্ডার ওসমান গনি র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এছাড়াও লজিস্টিক শাখার প্রধান, গান গ্রুপের প্রধান, প্রধান সমন্বয়ক, অর্থ শাখার প্রধান, আরসা প্রধান আতাউল্লাহর দেহরক্ষী আকিজ এবং মৌলভী অলি আকিজ’সহ ১১৭ জন আরসা সন্ত্রাসীকে ইতিপূর্বে গ্রেফতার করে। তাদের নিকট থেকে ৫৩.৭১ কেজি বিস্ফোরক, ৫ টি গ্রেনেড, ৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০ টি দেশীয় তৈরী হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৪ টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৬টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৭৮ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ৪ টি আইডি ও ৪৮ টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।

Comment here