♦♦কেন ধ্বংস করা হচ্ছে মুসলমানদের?♦♦
——–সাজ্জাদুল করিম——-
মেসোপটেমিয়া। মধ্যপ্রাচ্যের একদা প্রভাবশালী দেশ ইরাকের পূর্ব নাম। প্রাচীন সভ্যতার তীর্থভূমি। একসময় ইরাক ছিল মধ্যপ্রাচ্যের সমৃদ্ধ,ধনাঢ্য এক মুসলিম দেশ। তেল ও খনিজ সম্পদ,প্রাচুর্যে ভরপুর এক দেশ। সমৃদ্ধ দেশটির নেতৃত্বে ছিলেন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন।একনায়ক ও স্বৈরাচার হলেও দেশের উন্নয়নের প্রশ্নে ছিলেন আপোষহীন। তার সুদৃঢ় নেতৃত্বে পরমানু অস্ত্র নির্মানের দ্বারপ্রান্তে পৌছেই গিয়েছিল ইরাক।
ইরাকের বাড়বাড়ন্ত শক্তি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলের পছন্দ নয়। শক্তিশালী ইরাক ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই ইসরাইলকে নিরাপদ রাখা প্রয়োজন। ইসরায়েলের নিরাপত্তার স্বার্থে হামলা হল ইরাকে। আমেরিকার নেতৃত্বে। আগ্রাসনের নাম “অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম”। ইরাক নাকি মারাত্মক রাসায়নিক ও জীবানু অস্ত্র উৎপাদন করছে। ঠুনকো ও খোঁড়া অজুহাতে ধ্বংস করা হল ইরাক। সমৃদ্ধ,সম্পদশালী, শক্তিশালী দেশটি আজ ইঙ্গ-মার্কিন চক্রান্তে তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত।
মুসলিম বিশ্বের আরেক ধনী ও সমৃদ্ধ দেশ লিবিয়া। লিবিয়ানদের চাকচিক্যময় বিলাসী জীবন পশ্চিমাদের ও হার মানাত। আফ্রিকা মহাদেশে হলেও এটি ছিল মুলত আরব দেশ। জনসংখ্যার প্রায় সবাই আরবি ভাষাভাষী। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফী ছিলেন উচ্চবিলাসী ও স্বাধীনচেতা। তিনি সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে দেশকে আরো শক্তিশালী করার পক্ষপাতী ছিলেন। তার এই উচ্চ বিলাস ইহুদী-মার্কিন লবির পছন্দ ছিল না। এটিই কাল হল লিবিয়ার জন্য।
সুতারাং খোঁড়া অজুহাতে লিবিয়ায় হামলা হল। চোর-তস্করের মত হত্যা করা হল সার্বভৌম একটি দেশের স্বাধীনচেতা নেতা গাদ্দাফীকে। চুপ করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকল সমস্ত মুসলিম বিশ্ব। যেন এ সমস্যা মুসলমানদের নয়। এটি কেবল লিবিয়ার সমস্যা। ইঙ্গ-মার্কিন চক্রান্তে লিবিয়া আজ একটি দরিদ্র,যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বহুধা বিভক্ত ভঙ্গুর ব্যর্থ রাষ্ট্র।
প্রাচীন সভ্যতার আরেক পাদপীঠ সিরিয়া। মহানবীর স্মৃতিবিজড়িত মহান এক দেশ। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক সমৃদ্ধ,ঐতিহ্যবাহী গৌরবোজ্জ্বল এক শহর। এই শহরকে কেন্দ্র করেই হযরত মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে বিশ্বখ্যাত উমাইয়া শাসকেরা এশিয়া,আফ্রিকা,ইউরোপসহ অর্ধেক পৃথিবী জয় করেছিলেন। একদশক আগেও সিরিয়া ছিল মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম সামরিক শক্তিধর দেশ।
সিরিয়ারই গুরুত্বপূর্ণ গোলান উপত্যকা ইসরাইল জোর করে দখলে রেখেছে ১৯৬৭ সাল হতে। কেবল ইসরাইলের বৈরী হওয়ার কারনে গনতন্ত্র ও আরব বসন্তের নামে ধ্বংস করা হল প্রাচীন সভ্যতার দেশ সিরিয়াকে। ইসরাইলের পাশে শক্তিশালী কোন মুসলিম রাষ্ট্র টিকে থাকুক,এটি আমেরিকা-ইসরায়েল চাই না। তাই তো সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সুযোগে ইসরায়েল ইতিহাসের ভয়াবহতম বিমান আক্রমন চালিয়ে সিরিয়ার সামরিক শক্তির পুরোটাই গুড়িয়ে দিয়েছে।
অর্থনীতি খানিক দুর্বল। সম্পদের প্রাচুর্যও তেমন নেই। তবে বেশ শান্তিপূর্ণ দেশই ছিল ইয়েমেন। বিশাল ভুখন্ড ও জনসংখ্যা মিলে মধ্যপ্রাচ্যে নেতৃত্ব দেওয়ারই অবস্হানে ছিল ইয়েমেন। আমেরিকা-ইসরাইলের পছন্দ হয়নি সেটি। ষড়যন্ত্র করে ভাতৃঘাতী দ্বন্দ্ব লাগিয়ে দেওয়া হল। ব্যবহার করা হল মুসলিম বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ সৌদি আরবকে। সৌদি অর্থায়নে ইয়েমেনে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দেয়া হল। এ অন্যায্য যুদ্ধই ইয়েমেনকে পৃথিবীর সবচেয়ে বাস-অযোগ্য দেশে পরিনত করে।
এদিকে ইয়েমেন যুদ্ধের ব্যয় মেটাতে গিয়ে টান পড়ে ধনী ও সমৃদ্ধ সৌদি আরবের অর্থনীতিতে। অর্থনীতির ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সৌদি আরব এখন অর্থনীতি বহুমুখীকরনের নেশায় মত্ত। ফলে সৌদি নেতৃত্ব এখন নাচ,গান,সিনেমা,বেহেয়াপনার অনুমোদন দিয়েছে। সৌদি যুবরাজের নেতৃত্বে সৌদি আরব ক্রমশ ফিরে যাচ্ছে ইসলাম পূর্ব-যুগে। আইয়ামে জাহেলিয়াতে। মুসলমানদের জন্য যা সত্যিই মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক।
বাকী ছিল ইরান। ধনী ও তেল সম্পদে সমৃদ্ধ বিশ্বখ্যাত পারস্য সভ্যতার দেশ ইরান । একদা ইরানের পারস্য সভ্যতা সমগ্র বিশ্বকে আলো দেখিয়েছে। আজও শিক্ষা, সংস্কৃতি,জ্ঞান-বিজ্ঞানে ইরান অগ্রগামী এক রাষ্ট্র। কিন্তু অর্ধ শতাব্দী যাবত আমেরিকা ও তার দোসর পশ্চিমারা ইরানের উপর হাজারো নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। উদ্দেশ্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরানকে ধ্বংস করা। ফলে একদা ধনাঢ্য রাষ্ট্র ইরান এখন রীতিমত ধুঁকছে। তদুপরি আমেরিকা-ইসরাইল ইরানে হামলা করার আগাম ঘোষণা দিয়েই রেখেছে।
তুরস্ক মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ও সমৃদ্ধ এক রাষ্ট্র। একদা তুর্কী সালতানাত এর অধীনস্হ ছিল অর্ধেক পৃথিবী। বেশ কয়েক দশক পূর্বেও তুরস্কে হেজাব পরা,প্রকাশ্যে ধর্ম পালন নিষিদ্ধ ছিল। তখন তুরস্ক ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদীদের বেশ পছন্দনীয় ছিল। কিন্তু স্বাধীনচেতা,ইসলামী ভাবধারার প্রেসিডেন্ট এরদোগান আসার পর পরিস্থিতি পাল্টে যায়। আমেরিকা-ইসরাইল তুরস্ককে ধ্বংস করার ফন্দী- জিকির করতে থাকে। ইঙ্গ-মার্কিন ষড়যন্ত্রে শরনার্থী ও কুর্দি সমস্যার কারনে তুরস্কের অর্থনীতি বর্তমানে বেশ সংকটে। সম্প্রতি বেশ কঠিন সময় পার করছে তুরস্ক। ভবিষ্যতে তুরস্কের জন্য কি পরিণতি অপেক্ষা করছে তা সময়ই বলে দেবে।
বাংলাদেশ অপার সম্ভাবনার এক দেশ। সম্পদ নেই।
তবে আছে প্রচুর কর্মক্ষম জনশক্তি। এক দেশ,এক ভাষা,এক জাতি। হানাহানি নেই। নেই কোন ভেদাভেদ। রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। ফলে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে প্রত্যাশিতভাবেই। বাংলাদেশের এই এগিয়ে যাওয়া পছন্দ নয় মুসলিম বিদ্বেষী শক্তির। ফলে ষড়যন্ত্র করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের পাঠানো হল এ দেশে।
শুরুতে সকল বিশ্বশক্তি ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। এটি ছিল আসলে একটি কৌশল। কালক্রমে আমেরিকা, ভারত,জাপান,চীন সহ সবাই মিয়ানমারের পক্ষাবলম্বন করে। এরই মধ্যে মিয়ানমারের যোগসাজশে রোহিঙ্গাদের আমাদের সমাজে একীভুত করার ভয়ংকর এক প্রস্তাব দেয় বিশ্বব্যাংক। আরাকানকে বাংলাদেশের সহিত সংযুক্ত করার লোভনীয় প্রস্তাবও দেয় কোন কোন মার্কিন কংগ্রেসম্যান। এরপরও ভারত, ইঙ্গ-মার্কিন চক্রের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। ভারত ও মার্কিনীরা চাই না সফল,সমৃদ্ধ কোন মুসলিম দেশ।
ক্রমশ—
লেখক: আইনজীবী কক্সবাজার।