বুধবার , ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয়

এস আলমের ব্যাংক দখল: ইসলামী ব্যাংকের কর্মীরাও লুটের সহযোগী

জামাত-শিবির সংশ্লিষ্টতার কারণে যাদের ইসলামী ব্যাংক থেকে ছাঁটাই করতে চেয়েছিলেন, পরে তাদের অনেকেই এস আলমের লুটের সহযোগী হন। এই তালিকায় আছেন ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা। ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। তথ্য বলছে, ইসলামী ব্যাংক দখলের পর পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এস আলম।

মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা। ইসলামী ব্যাংকের সবচেয়ে পুরনো কর্মীদের একজন। গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, মনিরুল মাওলা ছাত্রশিবির করতেন। পরিবারের সদস্যরাও জামায়াত মতাদর্শী। ২০১৮ সালে তিনি যখন অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তখন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তাকে ছাঁটাই করতে চান এস আলম। তবে সে যাত্রায় টিকে যান মনিরুল। হয়ে যান এস আলমের সহযোগী।

২০২১ সালে পদোন্নতি পেয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হন মনিরুল। তার সময়ে ইসলামী ব্যাংকে ঘটে ভয়ংকর নভেম্বর, রিজার্ভ কেলেংকারিসহ বহু লুটতরাজ। মনিরুল এখনো ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শিখা হুসনে আরা বলেন, ‘কোনো ব্যাংকের কর্মকর্তা অপসারণ করা বা কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া এবং কোনো কর্মকর্তা যদি জনস্বার্থ বিরোধী কোনো কাজ করেন তাহলে তাকে অপসারণ করার দায়িত্ব পর্ষদের উপর।’

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার আলী। তিনি ১৯৯২ সালে ইসলামী ব্যাংকে প্রবেশনারি অফিসার হিসাবে যোগদান করেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক এই কর্মী ২০১৮ সালে ছিলেন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট। এস আলমের দলে ভিড়ে অল্প সময়ে দুটি পদোন্নতি বাগিয়ে হয়ে যান অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ইসলামী ব্যাংক এস আলমমুক্ত হলে অন্য কর্মীদের চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।

২০১৭ সালের পাঁচ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংক দখল করেন এস আলম। ব্যাংকে কর্তৃত্ব বাড়াতে পুরোনোদের সরিয়ে নিজের পছন্দের কর্মী নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন তিনি। এজন্য, ২০১৮ সালে গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই ও ডিজিএফআইকে দিয়ে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার তালিকা করেন।

অনুসন্ধানে এমন দুটি তালিকা পেয়েছে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন। যেখানে আছে দুই শতাধিক কর্মকর্তার নাম পরিচয়। ব্যাংক পরিচালনায় ঝুঁকি তৈরি হওয়ার আশঙ্কায় ছাঁটাই প্রক্রিয়া থেকে সরে আসেন এস আলম।

এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ আহসানুল আলম বলেন, ‘ওই সময়ে এস আলমকে সাহায্য করেছে জামায়াতেরই অনেকগুলো লোক। তারা তাদের আদর্শের সাথে বেইমানি করেছে শুধু প্রমোশন পাওয়অর জন্য।’

গত সাত বছরে ইসলামী ব্যাংকে প্রায় দশ হাজার কর্মী নিয়োগ দেন এস আলম। পুরনো এবং এস আলমের নিয়োগ দেয়া কর্মীদের কার্যক্রম খতিয়ে দেখতে তদন্ত করছে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ। এজন্য কাজ করছে তিনটি কমিটি।


সম্পর্কিত খবর