শুক্রবার , ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয়

রাজধানীর যানজট নিরসনে বসছে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি, থাকছে না হাতের ইশারা

ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে রাজধানীর ২২টি মোড়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ প্রযুক্তি তৈরি করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)।

গত বুধবার সকালে বুয়েটে অনুষ্ঠিত ‘ঢাকা শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন।

সভায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা ও জাতীয় সংহতি উন্নয়নবিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আবদুল হাফিজ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে বুধবার ঢাকার যানজট পরিস্থিতির উন্নয়নে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বুয়েটের দুজন পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ও অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামানের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বিশেষজ্ঞরা ঢাকার যানজট নিরসনে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেছিলেন।

ওই সভায় দেশীয় প্রযুক্তিতে বুয়েটের তৈরি ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা প্রদর্শন করা হয়। এ ব্যবস্থা সনাতন (ম্যানুয়াল) পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। অর্থাৎ সংকেতবাতি (লাল, সবুজ ও হলুদ) জ্বলা-নেভার বিষয় সনাতন পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। পরে ধাপে ধাপে এ পদ্ধতি স্বয়ংক্রিয়তার (অটোমেশন) দিকে উন্নীত করা হবে।

দেশীয় প্রযুক্তির সিগন্যাল বাতি বিষয়ে অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, অতীতে ইউরোপ কিংবা অন্যান্য দেশের উন্নত প্রযুক্তি বাংলাদেশে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব প্রযুক্তির জটিলতার কারণে কোনো পদ্ধতিই সফলভাবে প্রয়োগ করা যায়নি। আর এটা হয়েছে আমাদের দেশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা, সড়ক ব্যবহারকারী—কোনোটাই উন্নত বিশ্বের সঙ্গে মিল না থাকায়।’

তিনি আরও বলেন, খুবই উন্নততর প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো সহায়ক বা বিকল্প (ব্যাকআপ সাপোর্ট) ব্যবস্থা থাকে না। অথচ ট্রাফিক সিগন্যাল ২৪ ঘণ্টাই প্রয়োজন হয়। তাই এক ঘণ্টার জন্যও ওই ব্যবস্থা ব্যাহত হলে পুরো ব্যবস্থাপনাই অকার্যকর হয়ে যায়। এ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাকআপ সাপোর্ট রাখতেই দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

যেভাবে কাজ করবে দেশি ট্রাফিক সিগন্যাল
অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, এই সিগন্যাল দুভাবে কাজ করবে। এটি ‘সেমি অটোমেটেড সিগন্যাল এইড’। এখানে একটা বাটন (বোতাম) থাকবে, যেটাকে একবার ম্যানুয়াল আবার অটোমেটেড (স্বয়ংক্রিয়) করা যাবে। কম যানবাহন থাকলে নির্ধারিত সময়ের জন্য ‘অটোমেটেড মুডে’ চলবে। বেশি থাকলে ‘ম্যানুয়ালি’ সময় পরিবর্তন করে নেওয়া যাবে।

তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশ যে ধরনের কাজ করে, সেই ধরনের সুবিধা এতে থাকবে। তাদের আর হাত দেখাতে হবে না। সিগন্যালের মাধ্যমে ট্রাফিক বাতি দেখানো হবে। পুলিশ চাইলে যেকোনো সময় যেকোনো সিগন্যালের সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। সেখানে কিছু সতর্কতার ব্যবস্থা থাকবে। যেমন কোনো সিগন্যালে বেশি সময় লাগলে সেটি জানা যাবে। পথচারী পারাপারের জন্যও আলাদা সিগন্যাল থাকবে। এটা যেকোনো সময় আপডেট করা যাবে।’

বুয়েটের তৈরি ট্রাফিক সিগন্যালে খরচ কত
হাদিউজ্জামান বলেন, ট্র্যাফিক সিগন্যালে আগে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলো বেশি খরচে বাইরে থেকে আনা হয়েছে। আবার নষ্ট হলে সেগুলো সারাতে অনেক সময় লাগে। এভাবে সিগন্যালগুলো অকার্যকর হয়ে যায়। বুয়েটে তৈরি সিগন্যালের খরচ কম। তবে এটার আয়ুষ্কাল হয়তো বিদেশি সিগন্যালের মতো হবে না, তবে নষ্ট হলে দ্রুত সারানো যাবে।

যেসব স্থানে বসবে সিগন্যাল বাতি
এসব সিগন্যাল বাতি শিক্ষা ভবন মোড়, কদম ফোয়ারা ও মৎস্য ভবন মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মসজিদ মোড় হয়ে মিন্টো রোডের মোড়ে বসবে। পরে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, মহাখালী, খিলক্ষেত, বিমানবন্দর হয়ে আবদুল্লাহপুর মোড় পর্যন্ত এসব ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসানো হবে।

বুয়েট থেকে তৈরি এই ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা যানজট নিরসনের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মেটাতে পারবে বলে জানান অধ্যাপক মোয়াজ্জেম। বুয়েটের ট্রান্সপোর্টেশন ইঞ্জিনিয়ারিং শাখা থেকে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।


সম্পর্কিত খবর