শুক্রবার , ৬ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

জাতীয়

নিষেধাজ্ঞা শেষে রাঙামাটিতে পর্যটকদের ফিরে আসা: নতুন সম্ভাবনার আলোয় মুখরিত ব্যবসা

 

রকিব উদ্দিন রকি, রাঙামাটি: দীর্ঘ ২৪ দিনের অপেক্ষা শেষে শুক্রবার সকাল থেকে খুলে দেওয়া হলো রাঙামাটির সব পর্যটন স্পটগুলো। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এ শহরে স্থানীয় এবং দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে উঠেছে। বিশেষত ঝুলন্ত ব্রিজে এসে প্রথম দিনের সকালেই দেখা মিলেছে উৎসাহী পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। এই একটি ব্রিজ যেন সকলের মনে উৎসাহের ছোঁয়া এনে দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশাবাদী, পর্যটকদের এই আগমন ধারাবাহিকভাবে চললে বন্ধকালীন সময়ে যে ব্যবসায়িক ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

প্রথম দিনেই টিকেট কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা মোঃ সোহেল ও বোট ম্যানেজার মোঃ ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, পর্যটকদের মধ্যে ছিল বিশেষ উদ্দীপনা। প্রায় ৩-৪ শ’ পর্যটক টিকেট কেটেছেন এবং বোট ভাড়া নিয়ে রাঙামাটির শান্ত জলাশয়ে ভ্রমণ করেছেন। এছাড়াও, ১৫-২০টি ফাইবার বোট চলেছে প্রথম দিনেই। তারা আশা করছেন, সামনের শুক্রবার এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকদের আরও বেশি আগমন হবে। প্রথম দিনেই ভিড় দেখে বোঝা যাচ্ছে, রাঙামাটি শহর শীঘ্রই ফিরে পাবে তার পুরনো পর্যটকপ্রবণতাকে। পর্যটন স্পটগুলো ঘিরে নতুন করে ব্যবসায়িক আশার আলো দেখা দিয়েছে।

রাঙামাটির বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ীদের জন্যও এ দিনটি ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। হোটেল হিল প্যারাডাইসের মালিক মোঃ মঈনুল ইসলাম জানালেন, দীর্ঘ এক মাস বন্ধ থাকার পর অবশেষে পর্যটন কেন্দ্রগুলো খোলায় হোটেল রুমগুলোতে বুকিং শুরু হয়েছে। আগামীতে আরও রুম বুকিং হবে বলে আশা করা হচ্ছে, এবং এর মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দ্রুত কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। রাঙামাটির শান্ত ও সুন্দর পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব মিলিয়ে এটি পর্যটকদের জন্য একটি আদর্শ স্থান হয়ে উঠেছে।

এদিকে, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে আসা পর্যটকদের মধ্যে ছিলেন রাশেদ শাহরিয়ার রিপন এবং লোকমান হোসেন। তারা জানান, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার রাঙামাটি পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে শুনে আমরা ছুটে এসেছি। এখানে এসে ঝুলন্ত ব্রিজের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে। জায়গাটি এতটাই মনোরম যে আমরা বারবার ফিরে আসতে চাই। অনেক পর্যটকই তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ জায়গাটিতে এসে বিশেষভাবে আনন্দ উপভোগ করেছেন, যার ফলে রাঙামাটির পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে মানুষের ঢল নেমেছে।

রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান জানান, নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে এতদিন পর্যটকদের আসা নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল, তবে শুক্রবার থেকে তা আবার উন্মুক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও ব্যবসায়ীরা বিশ্বাস করেন, পর্যটকদের আগমন শুধু ব্যবসায়িক উন্নয়ন নয় বরং রাঙামাটির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশকেও চাঙ্গা করে তুলবে। এ দিক বিবেচনায় নিয়ে তারা আশা করছেন, পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুবিধা আরও বৃদ্ধি পাবে।

পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। পুলিশ সুপার ড. ফাহাদ হোসেন জানিয়েছেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং টুরিস্ট পুলিশ যৌথভাবে কাজ করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর বিশেষ টহল এবং পর্যটন এলাকায় টুরিস্ট ডিউটিরত থাকার জন্য পর্যটকদের আস্থা বেড়েছে এবং তারা স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে পারছেন। রাঙামাটির পর্যটন খাতকে আরও নিরাপদ এবং পর্যটকবান্ধব করতে জেলা প্রশাসন থেকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।

শুক্রবারে পর্যটকদের এই উপস্থিতি দেখে অনুমান করা যায়, আগামীতে এ আগমন আরও বৃদ্ধি পাবে। পর্যটকদের নিরবচ্ছিন্ন আগমনে স্থানীয় হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট, বোট সার্ভিস এবং অন্যান্য পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা এক নতুন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এছাড়াও পর্যটনের সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষগুলো তাদের জীবনে নতুন করে আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। রাঙামাটি যে নতুনভাবে পর্যটনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছে তা বলতে গেলে ভুল হবে না।

উল্লেখ্য, ১৯-২০ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটিতে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটনার পর সম্ভাব্য অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে প্রথমে রাঙামাটি এবং পরে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর নিরুৎসাহিতকরণ নির্দেশনা দেয় প্রশাসন। সর্বশেষ তিন পার্বত্য জেলায় ৮ অক্টোবর থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটক ভ্রমণে বিরত থাকার জন্য নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। এর আগে পাহাড়ে ওই সহিংসতার জেরে সাজেকে তিন দফায় ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করা হয়, যা পরে পাহাড়ের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনা করে তিন পার্বত্য জেলায় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটকদের ভ্রমণের ওপর নিরুৎসাহিতকরণ নির্দেশনা দেয় প্রশাসন।


সম্পর্কিত খবর