বুধবার , ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আন্তর্জাতিক

বিশৃঙ্খলা ছাড়াই মারকাজে সাদপন্থিরা, মহাসমাবেশের ডাক

ডেস্ক নিউজ:
বিশৃঙ্খলা ছাড়াই কাকরাইলে মারকাজ মসজিদে অবস্থান নিয়েছেন তাবলীগ জামাতের একাংশ সাদপন্থিরা। দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ‘সমঝোতার ভিত্তিতে’- দুই সপ্তাহের দায়িত্ব বুঝে পান। এ ছাড়াও তাবলীগ জামাতের আরেকপক্ষ বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়েরপন্থিদের কাছ থেকে ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বুঝে নেন। দায়িত্ব নিয়েই গতকাল জুমার নামাজ আদায় করেন তারা। এ সময় বিশৃঙ্খলা এড়াতে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য উপস্থিত ছিল সেখানে। কয়েক বছর ধরেই দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ চলছে। গত ৫ই নভেম্বর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশে সাদপন্থিদের নিষেধাজ্ঞার দাবিতে সরকারকে আল্টিমেটাম দেয় জুবায়েরপন্থিরা। পক্ষটি গত ১২ই নভেম্বর কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার মাঠে সাদপন্থিদের প্রবেশের সুযোগ দিলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা অচলের হুঁশিয়ারি দেয়। এরই প্রেক্ষিতে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হয়। মারকাজ মসজিদে প্রবেশের পর সাদপন্থিরা ৭ই ডিসেম্বর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছেন।

গতকাল ভোর থেকেই সাদপন্থিরা ঢাকায় আসতে শুরু করেন। তারা কাকরাইল মসজিদের দিকে রওনা দেন। সকাল ৮টার দিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী তারা মসজিদে প্রবেশ করেন। এই ভিড় পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে গিয়ে ঠেকে। শুরুতে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হয়নি। নিরাপত্তার স্বার্থে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে কাকরাইল মারকাজ মসজিদে শুরু হয় জুমার নামাজ এবং শেষ হয় সাড়ে ১২টায়। এরপর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে শুরু হওয়া মোনাজাত শেষে দুপুর ১টার দিকে দাওয়াতি কার্যক্রমে না থাকা সাদ অনুসারীরা কাকরাইল এলাকা ছাড়তে থাকেন।
এর আগে তাদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। নির্দেশনাগুলো হচ্ছে, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের রাস্তা যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করা যাবে, কিন্তু কোনো অবস্থান করা যাবে না। অবস্থান করা যাবে কাকরাইল মসজিদের পূর্ব এবং উত্তর ও দক্ষিণে। রমনা পার্কে কোনো সাথী প্রবেশ করবে না, কাকরাইল মসজিদের উত্তর অংশ থেকে হোটেল শেরাটন পর্যন্ত কেউ চলাচল করবে না, মসজিদ থেকে মগবাজার পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে, কিন্তু অবস্থান করা যাবে না। শাহবাগ থেকে টিএসসি এবং পরে দোয়েল চত্বর হয়ে হাইকোর্ট মাজার পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কেউ ঘোরাঘুরি করবে না ও কোনো প্রয়োজনেই সেখানে যাবে না, মেট্রোরেল দেখার জন্য মেট্রো স্টেশনে কেউ প্রবেশ করবে না; রাস্তার আশপাশে কেউ মানবিক জরুরত (ইস্তিঞ্জা) পুরা করবে না; রাস্তায় কোনো ময়লা-আবর্জনা ফেলা যাবে না। বরং কোনো আবর্জনা দেখলে নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করে দেবো; কোনো ভাই অসুস্থ হলে মেডিকেল টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করবে; কোনো স্থানে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে শুধু জিম্মাদাররাই তাৎক্ষণিক সমাধানের চেষ্টা করবেন। অপরাধীকে প্রয়োজনে প্রশাসনের হাতে সোপর্দ করবে। নিজের হাতে অবশ্যই কেউ আইন তুলে নেবো না।
২০১৭ সালে সাদপন্থি ও জুবায়েরপন্থিরা বিভেদে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে সংঘর্ষেও রূপ নিয়েছিল। এরপর থেকে দুইপক্ষ বিশ্ব ইজতেমা দুইবারে করার সিদ্ধান্ত নেন। মাঝে কোভিড মহামারীর কারণে ইজতেমা দুই বছর বন্ধও রাখা হয়। পরে ২০২২ সাল থেকে ফের দুই পর্বে ইজতেমা শুরু হয়।

আগের নিয়ম অনুযায়ী জুবায়েরপন্থিরা চার সপ্তাহ ও মাওলানা সাদপন্থিরা দুই সপ্তাহ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। মসজিদে অবস্থান নিয়েই সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ডাক দেন সাদপন্থিরা। সাদপন্থি কাকরাইল মারকাজ মসজিদের ইমাম মুফতি মুহাম্মদ আজিমুদ্দিন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তারা প্রথম পর্বের ইজতিমার আয়োজন করতে চান।
গত ৫ই নভেম্বর সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে মাওলানা জুবায়ের অনুসারী বলেন, দেশে ইজতেমা একবারই হবে, দু’বার নয়। টঙ্গীতে ইজতেমার মাঠ ও ঢাকার কাকরাইল মসজিদে দিল্লির মাওলানা সাদের অনুসারীদের আর ঢুকতে দেয়া হবে না। অন্যদিকে ৯ই নভেম্বর এক ভিডিও বার্তায় সাদপন্থি ইমাম মুফতি আজিমুদ্দিন আগামী শুক্রবার কওমি মাদ্রাসার ছাত্রদের কাকরাইল মসজিদে না আসার আহ্বান জানান। এরপর মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে জুবায়েরপন্থিরা বলেন, মাওলানা সাদের অনুসারীদের মসজিদে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।

তবে বুধবার রাতে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জরুরি এক বিবৃতিতে বলা হয়, কাকরাইল মসজিদ ও বিশ্ব ইজতেমা একক নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা থেকে সরে এসেছেন তাবলীগের জুবায়েরপন্থিরা। আগের নিয়ম মেনে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করবেন তারা। বিবৃতিতে বলা হয়, ১২ই নভেম্বর বর্তমান সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ওলামা মাশায়েখ বাংলাদেশের নেতাদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। দীর্ঘ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, ধর্ম উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যৌথভাবে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে তাবলীগের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পাঠকের মতামত


সম্পর্কিত খবর