ধারাবাহিক প্রতিবেদন-২ :
টেকনাফে সাগর পথে মালয়েশিয়ায় মানব পাচার নিয়ন্ত্রণহীন
মোঃ আশেক উল্লাহ ফারুকী,টেকনাফ :
টেকনাফ সীমান্ত উপজেলার সাগর উপকূলীয় বাহারছড়া,টেকনাফ সদর ও সাবরাং এ তিন ইউনিয়ন মানব পাচারের নিরাপদ পয়েন্টে পরিনত হয়েছে। এ তিনটি ইউনিয়নের সাগর উপকূলীয় এলাকার ১২ ছোট বড় ফিসিং ঘাটে মধ্যে ৬ টি ঘাট আলোচিত। বিশেষ করে বাহারছড়া ও টেকনাফ সদরের তুলাতলী, রাজারাজড়া, কচছফিয়া, শীলখালী ও শামলাপুর ঘাট দিয়ে গভীর রাতে ফিসিং বোট যোগে সাগর পথে মালয়েশিয়া মানব পাচারের আয়োজন চলে। মানব পাচার করে ফিরতি পথে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার দুদেশের জলসীমার মধ্যে হাত বদল হয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসে। মানব পাচারের বেশির ভাগ রোহিঙ্গা নাগরিক শিকার হচ্ছে। এ তিন ইউনিয়নে ৩০ জন ছোট বড় মানন পাচারকারী দালাল এ কাজে জড়িত থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নতূন পল্লান পাড়া ও মহেশখালীয়া পাড়ার এমন কোন বাড়ি নেই মানব পাচারে জড়িত নয়। সেই সাথে বাহারছড়া নোয়াখালী পাড়ার ইলিয়াস বাহিনী গং এর নেতৃত্বে চলে আসছে বেপরোয়া মানব পাচার কার্যক্রম। হ্নীলা ও বাহারছড়া এ দুটি ইউনিয়ন পাহাড় ও সাগর সংলগ্ন। এ সুবাদে এ ইউনিয়নের জনশ্রুত এলাকা দিয়ে প্রতিনিয়ত চলে মানব পাচার।
টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ অভিযানে মানব পাচার চক্রের সক্রিয় ৪ সদস্য সহ মালয়েশিয়া পাচারকালে ১৬ জনকে আটক করেছে নুরুল আমিন (২৫) নুরুল আফসার (১৯)মিনহাজ উদ্দিন (২০) মোঃ আল আমিন (২৪) গ্রেফতার
৪ নভেম্বর দিবাগত রাত অনুমান ০২.৫০ ঘটিকার সময় টেকনাফ ঝর্ণা চত্তর এলাকায় অবস্থানকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি যে, টেকনাফ থানাধীন টেকনাফ থানাধীন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী সাকিনস্থ পর্যটন বাজার হইতে ৫০০ গজ দূরে ফয়সালে লিজকৃত জায়গা সুপারি বাগানের ভিতর সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা জোর পূর্বক কিছু নারী ও শিশুদেরকে অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশ্যে আটক করিয়া রাখিয়াছে। উক্ত সংবাদটি প্রাপ্ত হয়ে তাৎক্ষনিক উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করিয়া ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে টেকনাফ থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে। মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ, পুলিশ সুপার, কক্সবাজার মহোদয়ের সার্বিক নির্দেশনা মোতাবেক টেকনাফ থানা পুলিশের একটি বিশেষ একটি টিম উক্ত সময় ঘটনাস্থল টেকনাফ উপজেলা টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লম্বরী পর্যটন বাজার হতে ৫ শত গজ দূরে এজাহারনামীয় ০৫নং আসামী ফয়সালে লিজকৃত জায়গা সুপারি বাগানের ভিতর পৌঁছালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এজাহারনামীয় গ্রেফতারকৃত আসামী ১। নুরুল আমিন (২৫),পিতা-মোঃ কাশেম, মাতা-নুর নাহার২। নুরুল আফসার (১৯), পিতা-কেফায়েত উল্লাহ, মাতা-আয়েশা খাতুন, উভয় সাং-দক্ষিন লম্বরী, ৩নং ওয়ার্ড, টেকনাফ সদর ইউপি,৩। মিনহাজ উদ্দিন (২০),পিতা-আবু তাহের, মাতা-হালিমা খাতুন, সাং-জাদিমুড়া, ০৯নং ওয়ার্ড, হ্নীলা ইউপি, সর্ব থানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজার, ৪। মোঃ আল আমিন (২৪), পিতা-রফিক সরকার, মাতা-তানিয়া পারভিন, সাং-জাহাজমারা, থানা-হাতিয়া, জেলা-নোয়াখালীগন ও পলাতক আসামী ৫। ফয়সাল(২৫), পিতা-হাজী আমির আহম্মদ, ৬। আজিমুল্লাহ(২৭), পিতা-অজ্ঞাত, সাং-লেঙ্গুরবিল, ০৩নং ওয়ার্ড, টেকনাফ সদর ইউপি, ৭। ইসমাইল(২৬), পিতা-অজ্ঞাত, ৮। ফেরদৌস আক্তার (৩৮), স্বামী-মোঃ আয়ুব, পিতা-মোহাম্মদ কবির, মাতা-মোহাম্মৎ সাজু, ৯। মোঃ ইউনুছ(২১), ১০। মোঃ রফিক(১৯), উভয় পিতা-মোঃ আয়ুব, সর্বসাং-পুরান পল্লান পাড়া, ০২নং ওয়ার্ড, টেকনাফ পৌরসভা, ১১। সাইফুল্লাহ(৪০)পিতা-হাফেজ আহম্মদ, সাং-দক্ষিণ লম্বরী ৩নং ওয়ার্ড, টেকনাফ সদর ইউপি, সর্বথানা-টেকনাফ, জেলা-কক্সবাজারসহ অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টাকালে টেকনাফ থানা পুলিশের বিশেষ টিমটি ঐদিন দিবাগত রাত ০৩.৩০ ঘটিকার সময় মানব পাচারকারীর ৪জন মানব পাচারের সক্রিয় সদস্যদের আটক করে এবং অন্যান্য আসামীগণ অন্ধকারে দিক-বিদিক দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।মানব পাচারের শিকার হওয়া ভিকটিম ০৩ জন নারী, ০৯ জন শিশুসহ মোট ১২ জন’কে উদ্ধার পূর্বক নিরাপদ হেফাজতে নেই। উদ্ধারকৃত ভিকটিমদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাদের মধ্যে ১২জন ভিকটিম বাস্তুচ্যুত মায়ানমার রোহিঙ্গা নাগরিক এবং তারা উখিয়া-টেকনাফ থানাধীন বিভিন্ন রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে বসবাস করে বলিয়া জানায়। উল্লেখিত ভিকটিমদের আর্থ-সামাজিক অনগ্রসরতা ও পরিবেশগত অসহায়ত্বকে পুঁজি করে উন্নত জীবন-যাপন, অধিক বেতনে চাকুরী ও অবিবাহিত নারীদেরকে বিবাহের মিথ্যা প্রলোভন দেখাইয়া প্রতারণা পূর্বক ছল-চাতুরীর আশ্রয় নিয়া যৌন নিপীড়ন, প্রতারণামূলক বিবাহ ও জবরদস্তিমূলক শ্রমসেবা আদায় এর অভিপ্রায়ে ৩/৪ দিন যাবৎ ধাপে ধাপে আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে বর্ণিত ভিকটিমদের ঘটনাস্থলে আনিয়া মালয়েশিয়া পাচারের জন্য জোরপূর্বক আটক রাখে। উদ্ধারকৃত ভিকটিম ও ধৃত আসামীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং স্থানীয় লোকজনদের নিকট হতে বর্ণিত পলাতক আসামীদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ সহ সংঘবদ্ধ মানব পাচার চক্রের সদস্যদের বিষয়ে জানা যায়।ধৃত আসামী ও পলাতক সহ অজ্ঞাতনামা আসামীদের সংঘবদ্ধ মানব-পাচার চক্রটি দীর্ঘদিন যাবত পরস্পর যোগসাজশে বাঙ্গালি ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরাণার্থীদের নিয়ে মানব পাচারের অপরাধ সংঘটিত করে আসিতেছে মর্মে জানা যায়। উক্ত ঘটনার বিষয়ে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। ধৃত আসামীদেরকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হইতেছে। এ দিকে ২ নভেম্বর হোয়াক্যাং ইউনিয়ন থেকে ১০ কৃষক অপহরণের শিকার হয়েছিল। ৪ নভেম্বর ২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার মুক্তিপণ দিয়ে সকলে ফিরে এসেছে।
© ২০২৪ টেকনাফ ভিশন- সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
Copyright © 2024 Teknafvision.com. All rights reserved.