লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি করে শিক্ষার্থীদের হত্যার ঘটনায় পৃথক দুটি মামলার প্রধান আসামি একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু। ঘটনার পর থেকেই রয়েছেন পলাতক। তবে শনিবার (১২ অক্টোবর) তার ফেসবুক প্রোফাইলে সৌদি আরবে তোলা একটি ছবির ক্যাপশনে ‘দোয়ার দরখাস্ত’ লিখে পোস্ট করেন তিনি। সরকার পতনের পর এটিই তার ফেসবুকে প্রথম পোস্ট করা ছবি। তার পোস্ট করা এ ছবি নিয়ে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা।
রোববার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিটি প্রায় ১৮০০ শেয়ার ও প্রায় ৮ হাজার কমেন্ট পড়েছে। এতে প্রায় ১৩ হাজার রিয়্যাক্ট পড়েছে। এরমধ্যে প্রায় ৬ হাজার হাসির রিয়্যাক্ট।
ছবির কমেন্টেসে তার অনুসারীরা আলহামদুলিল্লাহসহ বিভিন্ন ধরনের পজিটিভ মন্তব্য করেছেন। তবে অধিকাংশ মন্তব্যই তার বিরুদ্ধে। কেউ কেউ তাকে লক্ষ্মীপুরে আমন্ত্রণ জানিয়ে লিখেছেন ‘শিক্ষার্থীদের ওপর কতটি গুলি করেছেন, কত মায়ের বুক খালি করেছেন, তার হিসেব দিয়ে যেতে’।
আত্মগোপনে যাওয়ার দুই মাস আট দিন পর ফেসবুক পোস্টের মন্তব্যের ঘরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। এতে অনেকেই তার ফাঁসি দাবি করেছেন। কেউ কেউ কটাক্ষ করে সমালোচনাও করেছেন।
শাকিল নামে একজন লিখেছেন, ‘দেশে আসেন ভাই, গুলির হিসাব দিয়ে যান।’ মুহা. কাউছার হাবীব লিখেছেন, ‘তোদের বিচার একদিন বাংলার জমিনে হবে ইনশাআল্লাহ’। ইদ্রিস মিয়াজি লিখেছেন, ‘আপনি তো প্রকাশ্যে গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন, আপনার হাতে এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে, বাংলার মাটিতে আপনার জায়গা হবে না, আপনার বিচার আল্লাহ অবশ্যই করবে’। মো. ইসমাই লিখেছেন, ‘কেন আবার এসে গুলি করতেন? আপনাকে আসলেই অনেক ভালো জানতাম, আপনি এটা একটা কাজ করলেন, ছি’! আবদুল মুতালিব লিখেছেন, ‘থেরাপিতো মাফ হবে না, লক্ষ্মীপুরের কলঙ্কিত সন্তান’। রাকিবুল হাসান নকিব লিখেছেন, ‘দেশে আসেন ব্রো, সবগুলোর গুলির হিসেব দিয়ে যাইয়েন, যতগুলো মা এর বুক খালি করেছেন, এগুলোর হিসেবে দিয়ে যাইয়েন, কীভাবে পারেন এসব আমার মাথায় আসে না’। মাহিম হোসেন লিখেছেন, ‘মক্কা শহরের সবাই ভয়ে আছে, কখন আবার ফায়ার হয়’? রফিকুল ইসলাম নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘আল্লাহ আপনাকে ফাঁসির জন্য কবুল করুক।’ শাহাদাত হোসেন লিখেছেন, ‘পাখির মতো গুলি করে মানুষ মেরে এখন সাধু সাজেন।’ রায়হান লিখেছেন, ‘মানুষ মেরে ওমরাহ পালন, সৃষ্টিকর্তার সাথে দারুণ অভিনয়।’ গাজী সাব্বির আহমেদ লিখেছেন, ‘পীর সাহেব, আপনি পালাইছেন কবে?’ ফখরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বাসার ছাদ থেকে গুলি করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছিস। তোর ক্ষমা নেই। লক্ষ্মীপুরবাসী তোকে কখনো ক্ষমা করবে না। তোর বিচার লক্ষ্মীপুরেই হবে...’।
কেউ কেউ আবার ছবিটি পুরোনো বলেও মন্তব্য করেছেন। নতুন করে ফেসবুকে ছাড়া হয়েছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য তিনি পুরোনো ছবি ফেসবুকে ছেড়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে ফেসবুকে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সদর উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান একেএম সালাহ উদ্দিন টিপুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে নিহত সাব্বির হোসেন রাসেলের বাবা আমির হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের হত্যার সঙ্গে টিপু সরাসরি জড়িত। কিন্তু তিনি এখন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তার অবস্থান জানান দিচ্ছেন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী নুর মোহাম্মদ বলেন, টিপু চার শিক্ষার্থী খুনের আসামি হয়ে দুই মাসেও ধরা পড়েননি। তার গাড়িচালক মো. রাসেল অস্ত্র নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া করেছেন। তাকেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল মুন্নাফ বলেন, শিক্ষার্থী হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডের সময় ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহরের মাদাম ব্রিজ ও তমিজ মার্কেট এলাকার বাসার ছাদ থেকে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করেন টিপুসহ তার সহযোগীরা। এতে ঘটনাস্থলে নিহত হন চার শিক্ষার্থী। আহত হন শতাধিক। এ ঘটনার জেরে পিটুনিতে নিহত হন আরও আটজন। ওইদিনই টিপু পালিয়ে যান। এরপর থেকে কেউই তার অবস্থান জানতে পারেননি। টিপু লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক আলোচিত মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চার শিক্ষার্থী হত্যা মামলার প্রধান আসামি তিনি। এ ছাড়া তিনি পুলিশের ওপর হামলায় দায়ের করা মামলারও প্রধান আসামি।
© ২০২৪ টেকনাফ ভিশন- সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
Copyright © 2024 Teknafvision.com. All rights reserved.