টেকনাফে ‘অপহরণের’ মামলা নিচ্ছে না পুলিশ!
‘থানার সামনে বিচার চেয়ে মানবন্ধন’
টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি।
কক্সবাজারের টেকনাফে শীর্ষ মানব পাচারকারীদের হাতে অপহরণের শিকার জমি ব্যবসায়ী শামসুল আলমকে হাত, পা বাঁধা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তবে শামসুলের অভিযোগ, পুলিশ উদ্ধার করলেও এ ঘটনার ২ দিন পার হলেও পুলিশ কোনো মামলা নিচ্ছে না। এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে টেকনাফ পৌরসভায় থানাস্থল প্রেসক্লাবের সামনে বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসি।
মানববন্ধনে অপহৃত শামসুল আলম বলেন, ‘টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ পশ্চিম-উত্তরপাড়াস্থল প্রাইমারী স্কুলের পশ্চিম পার্শ্বে আবুল কালামের দোকানের সামনে থেকে গত রবিবার সকালে শীর্ষ মানব পাচারকারী এজাহার মিয়া ওরফে এজার মাঝির নেতৃত্বে একটি অস্ত্রধারী চক্র জিম্মি করে অপহরণ করে নিয়ে যায় আমাকে। এসময় সুর-চিৎকার দিলে তাদের হাতে অস্ত্রশস্ত্র থাকায় কোন লোকজন এগিয়ে আসেনি। পরে অজ্ঞাত এক জাগায় নিয়ে আমাকে ব্যাপক মারধর করে, পরিবারের কাছে ২০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে।’
তিনি বলেন, ‘পরে স্বজনারা পুলিশের সহতায় হাত, পা বাঁধা অবস্থায় সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের খালের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু গত দুই দিন ধরে শীর্ষ মানব পাচারকারী এজাহার মিয়াসহ অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। তার বিরুদ্ধে এর আগেও থানায় মানব পাচারসহ একাধিক মামলা রয়েছে। কিন্তু মানবপাচারকারী এজাহার মিয়ার নাম বাদ দিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে বলেন ওসি। অন্যতায় কক্সবাজার আদালতে মামলা করতে পরামর্শ দেন। আমরা সাধারন মানুষ থানায় বিচার না পায়, তাহলে যাবো কোথায়?।
অপহৃত স্বজন তারেক জমিল বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশেও সেই প্রদীপের আমলের মতো আচরন করছে পুলিশ। খুবই দুঃখজনক পুলিশ শীর্ষ মানব পাচারকারীসহ অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছে না। এ ধরননের আচরন সাধারন মানুষ যাবে কোথায়? এতে মানুষের কাছে পুলিশের আস্তা আরো কমে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘গত দুই দিন ধরে থানায় ঘুরেও মামলা নিচ্ছে না পুলিশ। উল্টো পুলিশ শীর্ষ মানব পাচারকারীর নাম বাদ দিয়ে থানায় অভিযোগ দিতে পরামর্শ দেন। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হলো শীর্ষ মানব পাচারকারীর জন্য একজন ওসির এতো দরদ কেন?। তাই আমরা হতাশ হয়ে সরকারের দৃষ্টি করতে বিচার চেয়ে আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। কার ইন্ধনে মামলা নিচ্ছে না, আমাদের বোধগম্য নই।’
অভিযোগ অস্বীকার করে টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমি কোন আসামিকে বাদ দিয়ে এজাহার দিতে বলেনি। আর মামলা না নেওয়া ঘটনাটি মিথ্যা। তাদের দেয়া অভিযোগ তদন্ত চলছে।’
টেকনাফের সাবরাংয়ের ইউপি সদস্য মোঃ ছিদ্দিক বলেন, ‘অপহরণের ঘটনায় বারবার তদন্ত পরও মামলা রেকর্ড করতে গড়িমসি করছে পুলিশ। অভিযোগ থেকে এজাহার মাঝিকে বাদ দিলে, এজাহার মামলা রেকর্ড করবে বলে জানায়। না হলে আদালতে যেতে পরামর্শ দেন ওসি।’
এদিকে সম্প্রতি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার ওসির বিরুদ্ধে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রকে অস্ত্র দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছিল। স্বজন ও এলাকাবাসীর দাবি, অস্ত্র হাতে ধরিয়ে জোর করে শিশুটির স্বীকারোক্তি আদায় করেছেন ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। এর পর মামলা দিয়ে তাকে আদালতে তোলা হয়। আদালত শিশুটিকে কারাগারের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় ওসিকে প্রত্যাহার ও শিশুটির মুক্তি চেয়ে টেকনাফসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন করেছেন উখিয়া-টেকনাফের শিক্ষার্থীরা।